ভারতের সঙ্গে সমঝোতা চায় পাকিস্তান, বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ কামনা

সাউথ বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক:

সিন্ধু পানি চুক্তি ও কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চায় ইসলামাবাদ

ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে পাকিস্তান। এ লক্ষ্যে দেশটির একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল রোববার (৮ জুন) লন্ডনে পৌঁছেছে। সফরে সীমান্ত উত্তেজনা ও সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরা হবে বলে জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ডন জানিয়েছে, এর আগে জুনের শুরুতে প্রতিনিধি দলের কয়েকজন সদস্য যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। লক্ষ্য ছিল ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ আকর্ষণ এবং নয়াদিল্লির কূটনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করা।

প্রতিনিধি দলে কারা আছেন?

প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, হিনা রাব্বানি খার, খুররম দস্তগির, সিনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সুবজওয়ারি, বুশরা আনজুম বাট এবং সাবেক পররাষ্ট্রসচিব জলিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।

লন্ডনে পৌঁছে জিও নিউজকে খুররম দস্তগির বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যেমন অতীতে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, এখন বৈশ্বিক শক্তিগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “সিন্ধু পানি চুক্তিতে ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ যদি আলোচনার টেবিলে না আসে, তাহলে বড় ধরনের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে।”

সিনেটর ফয়সাল সুবজওয়ারি বলেন, “পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের এমন উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থান কেবল দক্ষিণ এশিয়াই নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”

‘কাশ্মীর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার’

সাবেক রাষ্ট্রদূত শেরি রেহমান বলেন, “আমাদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে শোনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল বুঝতে পেরেছে—ভারতের পদক্ষেপ কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। সবাই একমত হয়েছেন, পানি কখনো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়।” তিনি আরও বলেন, “কাশ্মীর এখন গাজার পর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে।”

তিনি এ-ও জানান, “ভারতের প্রতিনিধিরা কেবল পাকিস্তানবিরোধী প্রচার চালাতে ব্যস্ত, আর আমরা এসেছি শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে।”

সিনেটর বুশরা আনজুম বাট জানান, “পেহেলগাম হামলার পর ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। এ নিয়ে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আমরা আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি।”

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি বলেন, “ভারত শান্তিপ্রিয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়েছে। এখন বৈশ্বিক শক্তির উচিত সরাসরি হস্তক্ষেপ করা।”

আন্তর্জাতিক দৌড়ঝাঁপ

৪ জুন, বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বে দলটি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর তারা ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও থিংক ট্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করেন।

অন্যদিকে, পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপদেষ্টা সৈয়দ তারিক ফাতেমির নেতৃত্বে আরেকটি দল ২ থেকে ৪ জুন রাশিয়া সফর করেছে। তারা রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

পাল্টা কূটনীতি: যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দল

ভারতও সাত সদস্যের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দলটির নেতৃত্বে আছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। বাকি সদস্যরা বিভিন্ন দলের সংসদ সদস্য ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ৫ জুন, তারা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই দলটিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *