নিজস্ব প্রতিবেদক | ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের খসড়া গঠনতন্ত্রে একটি অংশগ্রহণমূলক, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারা নিশ্চিত করতে শীর্ষ নেতার জন্য সর্বোচ্চ তিন মেয়াদের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের ঘোষণা
খসড়া গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে—১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪—এই তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনার সমন্বয়ে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গড়া হবে। ১৯৪৭-কে রাজনৈতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার সূচনা, ১৯৭১-কে স্বাধীনতার পূর্ণতা এবং ২০২৪-কে নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের সুযোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, গঠনতন্ত্রের খসড়া নিয়ে ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে আলোচনা হয়েছে এবং ২২ জুনের মধ্যে চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন করা হবে।
গণতন্ত্র ও নেতৃত্বে মেয়াদসীমা
দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ দলের প্রধান পদে তিন মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। প্রতি তিন বছর অন্তর কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। দলীয় প্রধান সরকারের দায়িত্বে গেলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে, যাতে দল ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য বজায় থাকে।
‘নতুন বাংলাদেশ’ কেমন হবে?
খসড়া অনুযায়ী, এনসিপি এমন একটি রাষ্ট্র চায় যেখানে থাকবে—
- সবার বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সংগঠনের স্বাধীনতা
- আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার
- দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা
- নারী, শিশু, কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা
- স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ
তারা উদ্ভাবনকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, টেকসই কৃষি, ও রপ্তানিমুখী প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে চায়।
ছায়া মন্ত্রিসভা ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো
ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচে ছায়া মন্ত্রিসভা (শ্যাডো ক্যাবিনেট) গঠনের কথাও বলা হয়েছে। এসব সদস্যরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতিবিষয়ক বিশ্লেষণ করবেন এবং বিকল্প শাসনের প্রস্তাব তৈরি করবেন।
এ ছাড়া, দলের জাতীয় পরিষদের ১০ শতাংশ সদস্য যদি দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, তবে তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে। দলের রাজনৈতিক পরিষদ হবে নির্বাচিত, যেখানে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী অতিরিক্ত সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন।
সার্বভৌমত্ব ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকার
সব ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের মানুষের জন্য সমান সুযোগ এবং জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের অঙ্গীকার করা হয়েছে খসড়া গঠনতন্ত্রে।