নিজস্ব প্রতিবেদক। ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫:বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে একটি নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপারস্পেশালাইজড হাসপাতালে দেশের প্রথম রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে সীমিত পরিসরে পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
চীনের কারিগরি সহায়তায় গড়ে ওঠা এই সেন্টারটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক রোবটিক পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের মানদণ্ডে তৈরি এই সেন্টারে রয়েছে ৬২টি অত্যাধুনিক রোবট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (AI)। এসব রোবটের মাধ্যমে রোগীদের অবস্থার ভিত্তিতে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফিজিওথেরাপি, স্নায়ুবিক পুনর্বাসন এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।বিএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই প্রকল্পে চীন সরকার প্রায় ২০ কোটি টাকার রোবটিক যন্ত্রপাতি অনুদান দিয়েছে। সেন্টারটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য চীনের সাত সদস্যের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বিশেষজ্ঞ দল ইতোমধ্যে ২৭ জন চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষিত জনবল অভিজ্ঞতা অর্জন করলে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে সেন্টারটি পুরোদমে চালু হবে।এই সেন্টারের মাধ্যমে স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, স্নায়ুবিক বৈকল্য, দুর্ঘটনাজনিত জটিলতা, নার্ভ ইনজুরি, ফ্রোজেন শোল্ডার ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথাসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা উন্নতমানের পুনর্বাসন সেবা পাবেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে যারা এখনও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগছেন—তাদের এই সেন্টারে বিনামূল্যে রোবটিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
সেন্টারটি শুধু বিশেষ উদ্দেশ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না; ভবিষ্যতে পরিকল্পিত নীতিমালার ভিত্তিতে সাধারণ রোগীদের জন্যও ধাপে ধাপে সেবার পরিসর উন্মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় যেন রোগীদের আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে থাকে, তা নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে এই প্রথম রোবটিক প্রযুক্তিনির্ভর পুনর্বাসন চিকিৎসা চালু হওয়ায় দেশের স্বাস্থ্য খাতে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই সংযোজন শুধুমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নই নয়, বরং হাজারো অসুস্থ মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো হিসেবে কাজ করবে।