নিজস্ব প্রতিবেদক:- ঢাকা, ২০ জুন ২০২৫:
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব জনাব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
সভায় জানানো হয়, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ছয়টি প্রধান কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। এ সকল কমিশন কর্তৃক দাখিলকৃত সংস্কার সুপারিশসমূহের মধ্যে যেসব প্রস্তাব প্রশাসনিক উদ্যোগেই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা।
১২১টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের মোট ১২১টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
সেগুলোর মধ্যে আটটি প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য বিবেচনা করে নিচের সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়:
১. মহাসড়কে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট:
পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের জন্য ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব। বাস্তবায়নে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ নির্দেশনা দেবে; জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন তদারকি হবে।
২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট হালনাগাদ ও ডায়নামিক করা:
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সকল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করবে। সকল ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য এবং মতামত জানানোর ব্যবস্থা যুক্ত হবে।
৩. ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠন:
সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য নতুন নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত ও দ্রুত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত।
৪. কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনায় বেসরকারি অংশগ্রহণ:
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও এনজিও ব্যুরো এক সপ্তাহের মধ্যে কৌশল নির্ধারণে সভা করবে।
৫. গণশুনানি চালু করা:
প্রতিটি সরকারি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি আয়োজন নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কৌশল নির্ধারণ করবে।
৬. আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন:
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ পর্যালোচনা করে সংশোধনের জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত।
৭. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন:
এটিকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’ হিসেবে গঠন করার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় চলমান প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত।
৮. ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-গভর্নমেন্ট শক্তিশালীকরণ:
সকল সরকারি সেবা একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করতে ICT বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
তদারকিতে আলাদা ইউনিট গঠন
প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের অধীনে “গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (GIU)” একটি তদারকি টিম হিসেবে কাজ করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও এ তদারকি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকবে।
সভায় জানানো হয়, বিগত মাসগুলোতে ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে মোট ১,০৬১টি সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই চলমান বা বাস্তবায়নাধীন।
প্রশাসনিক কার্যকারিতা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিক সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে এ ধরনের সংস্কার কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।